কোনো এক পুকুরের সকাল
কোনো এক পুকুরের সকাল
বাপন কর
ঘন নীল আকাশে ছোটো ছোটো পেঁজা তুলোর মতন সাদা সাদা মেঘ ধীরে ধীরে উড়ে চলেছে। সকালের মৃদুমন্দ বাতাস পুকুরের জল তলে কোনো পরিস্ফুটন না ঘটিয়ে বয়ে চলেছে। কিছু পোকা জলের উপর লম্বা লম্বা পা ফেলে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে চলেছে যেনো জলের উপর হেঁটে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতে চায়।
পুকুরের এক পাশে কিছু জটলা সেখানে কিছু বড়দের সাথে কচিদের জটলা। বড়রা গভীর আলোচনা করছে আর ধীরে সুস্থে সাঁতার কেটে চড়ে বেড়াচ্ছে। ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে গুলো ছোটাছুটি করছে, কেউ জলে খাবি খেয়ে কেরামতি করছে, কেউ বা জলের ভিতর থেকে ডিগবাজি দিয়ে উপরে উঠে নিচে পড়ছে। এক বয়স্কা অন্যজনকে বলছে এই চ্যাংড়া ছেলে মেয়েদের জন্য যে একটু শান্ত হয়ে সকালবেলার প্রাত সাঁতার টা দেবো তার উপায় নেই । এই ওদিকে যাও এদিকে বড়রা আছে এক মহিলা ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে বলে। কোথাও কোনো বিপদ এর চিহ্ন নেই সকলেই খুশি এবং প্রাত্যহিক কাজে নিবেশ করেছে।
পুকুর পাড় দিয়ে ছোট্ট তাতাই যাচ্ছিল। হঠাৎ সে একটা ছোটো আকারের ঢিল তুলে নিয়ে মারলো পুকুরের মাঝে দড়াম করে।জলে আলোড়ন সৃষ্টি হলো ছোটো ছোট মাছগুলো ভয়ে তাদের খেলা ভুলে সঙ্গে সঙ্গে জলের অতলে ডুব মারলো। হাহা দেখো দেখো বাচ্চা গুলো গাছের পাতা পড়ার আলোড়ন দেখে পালালো যাক বাবা বাঁচা গেলো, পুকুরের জল টাকে অস্থির করে তুলেছিল যাক ছোড়া গুলো গেছে আপদ গেছে , এবার একটু আমরা শান্তি করে সকালটা উপভোগ করতে পারবো, এক বড়ো লাটা মাছ অন্য তেলাপিয়া মাছ কে হেসে বললো।
এদিকে তাতাই এর ভীষণ রাগ সে ভাবতে পারে নি বড়ো মাছগুলো তাঁর ঢিল এর তারা কে এরকম ভাবে অবজ্ঞা করবে। তাহলে বেটা গুলো বোধহয় কানে কম শোনে। কিন্তু তাতাই এর অন্তরাত্মা বলে ওঠে না তাতাই ওরা তোমার ঢিল কে সিরিয়াস ভাবে নেয় নি।এবার তাতাই আত্মসম্মান জেগে ওঠে সে এবার একটা বড়ো মাপের ঢিল তুলে নেয় , এবার বড়ো মাছগুলোর একটাকে তাক করে শটান ছুড়ে দেয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ঢিল টা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বড়ো মাছগুলোর ভির থেকে একটু দূরে গিয়ে পুকুরে পড়ে বড়ো রকমের তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এবার জটলার ভিড়ের মধ্যে আলোড়ন শুরু হয় ঠিক তখন জটলার বাইরের দিকে থাকা এক যুবক মাছ ঘুড়ে তাতাই এর দিকে চেয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে আমাদের বড়ো বিপদ উপর থেকে, সকলে একবার তাতাই এর দিকে চেয়ে প্রায় একসাথে কালবিলম্ব না করে জলের ভিতরে চলে যায়। এবার তাতাই এর চোখে মুখে যুদ্ধ জয় এর ছবি ফুটে ওঠে এবং সে পুকুর পাড় ছেড়ে মাঠের দিকে চলে যায়।
এখন দিগন্ত বিস্তৃত জল তলে কেবল জলের মিইয়ে যাওয়া ছোটো ছোটো তরঙ্গ এর আলোড়ন, তার উপরে উপরে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ে চিকচিক করে ওঠে। কোথাও কোনো জটলা নেই। বৃদ্ধ মাছেদের চড়ে বেড়ানো নেই। নিত্য দিনের কোলাহলময় শিশু মাছ গুলোর কোলাহল নেই। আছে শুধু জল আর জল। এরকম ভাবে কত মাছেদের সমাজে ত্রাস এর সৃষ্টি হচ্ছে যার কোনো সুরাহা নেই। আবার আগামী কাল সকাল হবে সকলে আবার সব ভুলে আরো একটা সকাল শুরু হবে।