মেঘের দেশে

৩০২৫, হকিং স্টেশন,তোমরা আজ যেমন দেখছ আমাদের এই মেঘের দেশ বরাবর সেরকম কিন্তু ছিল না। আগে আমরা মানে মানুষ এরা পৃথিবীর ওপরে স্থলে থাকতাম জলেও থাকতো কেউ কেউ কিন্তু তাঁদের সংখ্যা অনেক কম ছিল ।জলে জাহাজ, স্টিমার, নৌকো, লঞ্চ ইত্যাদি চলত । আজ আমরা আমাদের এই মেঘেদের রাজ্যে থাকতে বাধ্য হয়েছি । তোমরা নিচের দিকে তাকালে আজ যে কালো বিষাক্ত ধোঁয়ার আস্তরন দেখতে পাও সেটা কিন্তু বরাবর ছিল না । কোন একদিন ঐ ওখানে সকাল বেলাতে পাখিরা কলরব করে দিন শুরু করতো তারপর সারাদিনের ব্যাস্ততা শেষে আবার কলরব করতে করতে দিন শেষের বার্তা দিয়ে উড়ে যেত। মাঝে মানুষ সহ অন্যান্য জীবেদের কার্যকলাপে পৃথিবীর ভুস্থল মুখরিত হয়ে উঠত। তখন মেঘেদের রাজ্যে কেবল উড়োজাহাজের চলাচল। কখনো কখনো রকেট নিচ থেকে মেঘের রাজ্যের বুক চীরে মহাশূন্যে উড়ে যেত। তখন আমরা কি জানতাম যে একদিন আমদের থাকতে হবে এই মেঘেদের উপর ঘরবাড়ি বানিয়ে না তখন জানতাম আমরা যেটাকে এতদিন আমাদের আশ্রয়দাতা হিসাবে আমাদের পূর্বপুরুষ রা ব্যবহার করে গেছে সেটাই আমাদের পক্ষে এক মৃত্যুপুরীর নরক হিসাবে বিবেচিত হবে। তোমরা এখান থেকে বহু দূরে হিমালয় এর প্রান্তে এখনও দেখতে পাবে কিছু উঁচু উঁচু পাহাড় এখনও নিচের মৃত্যুপুরীর থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নির্বাক ভাবে পূর্বের ইতিহাস ব্যাঞ্জন করে চলেছে যেন বলছে দেখ তোমরা কি করেছ আমাদের সর্বাঙ্গে কালো ক্ষত তে মুড়ে দিয়েছ কিন্তু আমরা আজো বেঁচে আছি।যেন তাঁরা মানুষের দুরবুধধিতার কে ধিক্কার জানাবার জন্য এখনও জেগে আছে। বহুবছর আগের কথা এক বিভিশিকাময় যুধ্য আমাদের প্রাণের পৃথিবীর সর্বনাশ করে দিয়ে গেলো। তখন মানুষ বিজ্ঞানে প্রযুক্তিতে অনেকটাই উন্নতি করে ফেলেছে তাঁর জোরেই সেই ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা থেকে কিছু মানুষ এবং মানুষের সহায়তায় ওপর কিছু জীব প্রজাতি আজো টিকে আছে এই পৃথিবীর মেঘের রাজ্যে। আমি তোমাদের সেই ধ্বংসলীলা থেকে এইমেঘ রাজ্য গড়ে ওঠার কাহিনি শোনাবো। তখন পৃথিবীতে অনেক আলাদা আলাদা দেশ ছিল তাঁদের সন্মিলিত ভাবে একটা আন্তর্জাতিক সংঘটন ইউনাইটেড নেশন সদ্য এক উড়ন্ত শহর তৈরি করেছে । প্রাথমিক ভাবে যে সকল নাগরিকরা নিজেদের দেশে বঞ্চিত এবং অন্য কোন দেশ তাঁদের নাগরিকত্ব বা আশ্রয় দিতে চায় না তাঁরা, কিছু বৈজ্ঞানিক রা এবং কিছু বিশেষ ধরনের গেস্ট রা আশ্রয় পেলো সেই নব নির্মিত শহরে । যেখানে সকল নিওম কানুন সব ইউনাইটেড নেশন দ্বারা পরিচালিত হত। সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু নিচের দুটো দল দেশ ন্যাটো দেশের দল এবং রাশিয়া বন্ধু দেশের দল এর মধ্যে যুধ্য লেগে যায়। একে অন্যের ওপর পরমানু ও হাইড্রোজেন বোমা দ্বারা আঘাত করে তাঁর ফলে পৃথিবীর ওপর এক তেজস্ক্রিয় বিষাক্ত ধোঁয়ার আস্তরন তৈরি হয় যেটা আজো আছে এবং তোমরা উপর থেকে যেই কালো সমুদ্র দেখতে পাও । তখন অনেক ওপরে ইউনাইটেড নেশন সেই উড়ন্ত শহর থাকায় সেখানে এর কোন আঁচ লাগে না । সেই সময় অনেক লোক নিচ থেকে পালিয়ে সেই উড়ন্ত শহরে আশ্রয় নিতে পেরেছিল । উরন্ত শহর খুব ডেলিকেট শহর খুব নিওম নিতি মেনে চলতে হয়। অতিরিক্ত লোকেরা শহরের প্রান্তে এক পরিত্যাক্ত স্থানে কষ্টের মধ্যে কম সম্পদ নিয়ে কোন রকম ভাবে দিনযাপন করে বেঁচে থাকতো। এই রকম একটা পরিবারের সন্তান হল তমাল । তমাল ও তাঁর বাবা মা কে নিয়ে এক ছোট্ট সংসার । তমাল এর ঠাকুরদা এবং তাঁর বাবা মাকে নিয়ে নিচ থেকে এই উড়ন্ত শহরে একটা ফর সিটার 747 প্লেনে করে চলেএসেছিল । ঠাকুরদা সেটা তমালকে ওড়ানো শিখিয়ে দিয়েছিল অনেক ছোটবেলাতেই । আজ ঠাকুরদা নেই কিন্তু সেই প্লেন টা আছে। প্লেন টার কাছে গেলে ঠাকুরদাকে মনে পড়ে এর তমাল খুব মিস করে তাঁকে। আজ বাবা মা শহরের ভিতরে কাজে গেছে। আজ 747 প্লেনে এর কাছে গিয়ে ঠিক করে আজ একটু হিমালয় এর ওপর থেকে উড়ে আসবে কখনো ওদিকে সে যায় নি অনেকটা দূর । কিন্তু সেখানে নাকি এখন কিছু কিছু পাহাড়ের মাথায় নাকি বৌদ্ধ সন্নাসিরা থাকে। সে একটু দেখতে চায় এটা কি সত্যি নাকি নিছক একটা গুজব। এই মনে করে সে প্লেনটার ট্যাঙ্ক তেলে পূর্ণ করে অতিরিক্ত কিছু তেল নিয়ে উড়ে যায় অজানা হিমালয় এর উদ্দ্যেশে। বেশ খানিকক্ষণ ওড়ার পরে কালো ধোয়া ভেদ করে এক শুভ্র পর্বত এর চুড়া তমাল কে হাসিমুখে স্বাগত জানাই। তমাল খুশিতে ডগমগ করে আরও এগিয়ে যায়। আরও কিছু পর্বত এর চুড়া সে দেখতে পায় কিন্তু সেখানে কোন মানুষের চিহ্ন চোখে পরে না। এরকম বেশ কিছু দূর চলার পর সে একটা পাহাড়ের খাঁজে অদ্ভুত বেমানান আকৃতি দেখতে পায়। তমাল সেটার রহস্য জানতে আগ্রহি হয় এবং প্লেন টাকে অটো মোডে রেখে দড়ি বেয়ে নীচে নেমে এসে দেখে , পাহাড় এর এক ধারে কেটে সমতল করা হয়েছে আর সেই পাহাড়ের ভিতরের দেওয়ালে একটা গর্ত গর্তের উপরে শঙ্কু আকৃতির চুড়া যেখানে জল পরলে গড়িয়ে নীচে নেমে আসে সেখানে একটা নালা আর সেই নালার শেষপ্রান্তে একটা জলাধার। বা জল সংগ্রহের খুব সুন্দর বাবস্থা তমাল ভাবে আর চারিদিকটা চেয়ে দেখে। উপরে নীল আকাশ নীচে দিগন্ত বিস্তৃত কালো ধোঁয়ার আস্তরন যেন এক রহস্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে এবং তাতে মৃদু মৃদু কম্পন সেই রহস্যের সাথে হুমকির সুরে কৌতুক করছে সাথে সাথে। দূরে দূরে শুভ্র বরফে ঢাকা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হয় কোন এক চাপা পড়া জীবের হাতের আঙ্গুল কালো চাদর ফুঁড়ে বের হয়ে আছে। জায়গাটার বাইরের তিন ধরে পরিখা দিয়ে ঘেরা। পরিখার সামনের দিকে এক বন্ধ দরজা দরজার ওপর প্রান্ত থেকে ঘোরানো পাহাড়ি রাস্তা নীচে নেমে গেছে। এখনও পর্যন্ত কোন জীব এর দেখা সে এখনও পায়নি। তমাল সাহসে ভর করে একটা টর্চ জ্বালিয়ে গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্রবেশের মুখে সাকুল্যে একজন কোনরকমে মাথা নিচু করে ঢুকলেও খানিকদুর চলার পরে মাথা ছাড়িয়ে একহাত উঁচুতে ছাদ। আর পাশাপাশি দুজন ভালোভাবে হেঁটে যেতে পারবে। নিচের মেঝে খশখসে কিন্তু দুপাশের দেওয়াল মসৃণ। এরকম বেশ খানিকদুর চলার পরে এক ঘরে চলে আসে। সেই ঘর খুব বড় না হলেও একজনের জন্য উপযুক্ত। ঘরের একধারে বসার আসন তাঁর সামনে কিছু ঘটি বাটি ইত্যাদি অগোছালো হয়ে পরে আছে উল্টোদিকে একটা পাথরের বেদি তে আলো পড়ার সাথে সাথে তমাল চমকে উঠে দেখে সেখানে এক সাদা কঙ্কাল শায়িত ।মনে হয় যে হতভাগ্য এখানে থাকতো তাঁর কঙ্কাল।বহুদিন আগে অনাহারে দেহত্যাগ করেছে। আর এই বেদিটাই তাঁর মৃত্যুশয্যা । কঙ্কাল এর গায়ে এখনও গেরুয়া রঙের কিছু পোশাক এর অবশিষ্টাংশ লেগে আছে। সেই পাথরের কঙ্কাল বেষ্টিত খাটের পাশে এক ছোট বেদির ওপর কিছু রাখা ওটা কি । কাছে গিয়ে তমাল বুঝতে পারে এটা একটা পুরনো পুঁথি । হয়তো ঐ হতভাগ্যের সংগ্রহ করা পুঁথি কিম্বা উনিই রচয়িতা। পুঁথিটা সে তুলে নিয়ে দেখতে চেষ্টা করে কি লেখা আছে কিন্তু সে ভাষাটা বুঝতে পারে না। সে সেটাকে তুলে নেয়। অনুমতি দেবার মতন কোন লোক না থাকায় বিনা বাধায় পুঁথিটা সে পকেটস্থ করে বাইরে বেড়িয়ে আসে । এরপরে সে আবার তাঁর প্লেন এ করে ফিরে আসে বাড়িতে। প্লেন এর কম্পিউটার এর মাধ্যমে পুঁথিটার একটা স্ক্যানার তৈরি করে পুঁথিটা স্ক্যান করে বুঝতে পারে পুঁথিটাতে মেঘ কে কিকরে শক্ত ভাসমান মেঘ করা যায় তাঁর বিদ্যা লেখা আছে। তমাল এই অমুল্য অসাধারন আবিস্কার জেনে খুশি হয়ে লাফিয়ে ওঠে। কিন্তু পরখকনেই সেই খুশির ভাব স্তিমিত হয়ে যায়। কারন মেঘ কে জমাবার জাদুগরি তরল 'কাদম্বিনি-প্রভঞ্জন' প্রস্তুত করার মুল উপাদান হল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝর টাইফুন টিপ এর কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করা জলীয় বাস্প থেকে প্রস্তুত জল । এ পুঁথির সত্যতা যাচাই করতে গেলে সেটা লাগবেই আর সেটা তমাল কিম্বা তমালএর প্লেন এর পক্ষে সম্ভব নয়।সেই রাতে খেতে বসে তমাল পুঁথি আবিস্কার থেকে কাদম্বিনি-প্রভঞ্জন প্রস্ততির সকল কথা তাঁর বাবামাকে বলে। ছেলের দুঃসাহসে প্রথমে বুক কাঁপলেও কিন্তু নতুন আবিস্কার এর গর্ব এবং তাঁদের দুঃসময় এর অন্তের কথা ভেবে চোখ ঝলমল করে ওঠে। এরপর তমাল এর বাবা মা শহরের উচ্চমান্য বাক্তিদের ব্যাপারটা জানায় । তারপর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক দের সন্মিলিত চেষ্টায় কাদম্বিনি-প্রভঞ্জন প্রস্তুত হয়। তারপর সেই কাদম্বিনী – প্রভঞ্জন দিয়ে মেঘেদের জমিয়ে এই ভাসমান রাজ্য গড়ে ওঠে। যে রাজ্য মেঘের উপর তৈরি । যে মেঘ গুলো নিজেরা জন্মাত আবার বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ত। কেউ কোনোদিন ভাবে নি এই মেঘেরা থাকার জন্য জায়গা দেবে। চাষ করার জন্য জমি দেবে। শুধু সম্ভব হয় তমাল এর আবিস্কার করা এক অজানা বাক্তির পুঁথির জন্য। চারিদিকে তমাল এর জয়জয়াকার পরে যায়। এটা শুনে তমাল তাঁর প্লেন ছাড়াই আকাশে ভাসতে থাকে তখন দূর থেকে আওয়াজ আসে তমাল ওঠ রে আমাদের নটাতে ফ্লাইট তোর জন্য কি আমরা আমাদের ফ্লাইট টা মিস করবো। তমাল ধরমর করে উঠে দেখে সে মেঘেদের রাজ্যে নয় নিজের বিছানাতে শুয়ে ছিল। ওদিকে মা বলছে যা তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে আয়।

Popular posts from this blog

Some Funny Mathematical Questions

Puthon3

পৃথিবীর কোনো এক আদিম সকাল